OUR BUYERS
.
|
আরটেক্স ফ্যাব্রিকস, মরিয়ম টেক্সটাইল দিয়ে শুরুটা করেছিলেন মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম। এখনো ওই নামেই প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে আছে নোমান গ্রুপের অধীনে। ১৯৮৭ সালে এসে বড় ছেলে এএসএম রফিকুল ইসলাম নোমানের নামে প্রতিষ্ঠা করেন নোমান গ্রুপ। বর্তমানে এ গ্রুপের অধীনে ভিন্ন ভিন্ন নামে রয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠান। অন্তত ৮০ হাজার শ্রমিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত রয়েছেন। বার্ষিক টার্নওভার ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার।
দেশের শীর্ষস্থানীয় রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান নোমান গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামের এ পথচলা অবশ্য ছিল বেশ বন্ধুর। পারিবারিক আর্থিক অনটন দেখা দিলে স্বাধীনতার আগে তিনি চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার নিজ গ্রাম ছেড়ে চলে আসেন ঢাকায়। রাজধানীর খিলগাঁওয়ের একটি মেসে থেকে কমিশনের ভিত্তিতে পোশাক বিক্রির কাজ শুরু করেন। পণ্য বিক্রি করে মাসে কমিশন পেতেন ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। পাশাপাশি নিজের পছন্দে পণ্য তৈরি করে তাও বিক্রি করতেন। কমিশনের পাশাপাশি নিজের উদ্যোগে পণ্য বিক্রির মাধ্যমে একটু একটু করে মূলধন বাড়াতে থাকেন নুরুল ইসলাম। যুদ্ধ শেষে তৈয়ব আশরাফ টেক্সটাইল মিলসের প্রতিষ্ঠান মরিয়ম টেক্সটাইল, আরটেক্স ও নাজনীন ফ্যাব্রিকস তিনি ভাড়ায় নেন। শুরুতে মশারি ও গেঞ্জির কাপড় তৈরি করতেন। ১৯৭৬ সালে পাওনা ঋণ আদায়ে এসব কারখানা একে একে নিলামে তোলে ব্যাংক। নিলামে অংশ নিয়ে যন্ত্রপাতিসহ কারখানাগুলো নুরুল ইসলাম কিনে নেন। মাত্র ২২ জন শ্রমিক নিয়ে ১৯৭৬ সালে শিল্পোদ্যোক্তা হিসেবে তার পথচলা শুরু। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। পণ্য উৎপাদনের কাঁচামাল কেনা থেকে শুরু করে নকশা, রঙের ব্যবহার, বিক্রি—সবকিছুই শুরুতে নিজে করেছেন। এখনো সুযোগ পেলে নকশা, কাঁচামাল কেনা, উৎপাদনের প্রতিটি ধাপের কাজের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখেন। বর্তমানে ছেলে এএসএম রফিকুল ইসলামের হাতে প্রতিষ্ঠানের ভার তুলে দিয়েছেন। আর নিজে পেছন থেকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন উপদেষ্টা হিসেবে। ১৯৭৬ সাল থেকে ব্যবসা শুরু হলেও নোমান গ্রুপের যাত্রা ১৯৮৭ সালে। আর আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের পণ্য রফতানি শুরু হয় ২০০০ সালে এসে। এজন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফ্যাব্রিকস নামে রফতানিমুখী হোম টেক্সটাইল প্রতিষ্ঠান। এটি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা নুরুল ইসলামের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ছেলের নামে নামকরণ করা হয়েছে। বর্তমানে নামকরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের জন্য পোশাক রফতানি করে যাচ্ছে গ্রুপটি। এর মাঝে রয়েছে আইকেইএ, টার্গেট, জিএপি, জেসি পেনি, টেস্কো, লি অ্যান্ড ফাং, আমেরিকান এগল, ক্যারফুর, ডিজনি, নাইকি, জারা, ম্যাঙ্গো এবং ইউনিক্লো, ওয়ালমার্ট, কে-মার্ট, পিভিএইচ, নিটারি, এসপ্রিট ও এইচএমএ। মূলত ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও এশিয়ার দেশগুলোয় নোমান গ্রুপ পণ্য রফতানি করে থাকে। এ পর্যন্ত নোমান গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সেরা রফতানিকারক হিসেবে প্রায় অর্ধশত জাতীয় রফতানি পদক পেয়েছে। এর মধ্যে দশটির বেশি ছিল শীর্ষ রফতানিকারকের স্বীকৃতি। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সহায়তায় এ স্বীকৃতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য শীর্ষ রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফ্যাব্রিকস দুটি স্বর্ণপদক পেয়েছিল। এছাড়া নোমান গ্রুপের আরো দুটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান স্বর্ণপদক ও ব্রোঞ্চপদকসহ মোট চারটি পদক লাভ করেছিল। নুরুল ইসলাম জীবনের বড় অংশই কাটিয়েছেন পোশাক ও বস্ত্র খাতের ব্যবসার সঙ্গে। তুলা থেকে সুতা আর সুতা থেকে কাপড় উৎপাদনের সবকিছু নিয়েই তার ধারণা ছিল। আর তাই এ ব্যবসায়ই নিজেদের সম্প্রসারিত করেছেন অভিজ্ঞতার বুননে। জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফ্যাব্রিকসের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৪ সালে। শুরু থেকেই তাদের লক্ষ্য ছিল রফতানিতে দেশের সেরা হওয়া। রফতানির প্রথম বছর ২০০০ সালে তারা ইউরোপের বাজারে ৬৫ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি করে। প্রথম রফতানি পণ্য ছিল বিছানার চাদর বা বেডশিট। দুই যুগের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটির রফতানির পরিমাণ বেড়েছে বহুগুণ। শুরু থেকেই পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করার প্রতি সর্বোচ্চ মনোযোগ দেয়ার কারণে এখন পর্যন্ত তাদের পণ্য নিয়ে গ্রাহকের কোনো অভিযোগ নেই। জাবের অ্যান্ড জোবায়ের বর্তমানে ১৮-২০ ধরনের পণ্য যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রফতানি করে। প্রতিষ্ঠানটির পণ্যের বড় ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে আইকিয়া, এইচঅ্যান্ডএম, ওয়ালমার্ট, টার্গেট, কেমার্ট, ক্যারিফোর ইত্যাদি। নোমান গ্রুপ ২০০৯ সালে টেরিটাওয়েল, ডেনিম, উইভিংসহ সাতটি কারখানা গড়ে তোলে। নিজস্ব বিনিয়োগের পাশাপাশি ব্যাংক ঋণ দিয়ে গাজীপুরে গড়ে তোলা হয় এসব কারখানা। কিন্তু গ্যাস সরবরাহ না পাওয়ায় সাত বছর উৎপাদন শুরু করা যায়নি। কিন্তু সংকটে দমে যাওয়ার পাত্র নন তারা। কারণ জানতেন, ব্যবসায় ধৈর্য নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়। সেই ধৈর্যের সুফল পাওয়া যায় ২০১৫ সালে এসে। গ্যাস সংযোগ মেলায় চালু হয় কারখানাগুলো। নোমান গ্রুপের ৩২টি প্রতিষ্ঠানের সব পোশাক ও বস্ত্র খাতের। সব কটিই ব্যবসাসফল। প্রতিষ্ঠানগুলো এমনভাবে পরিচালিত হয়, যেখানে প্রয়োজনের বেশি পণ্য তৈরি হয় না। এ কারণে কারখানাগুলোয় পণ্যের অপচয়ও কম হয়। চাহিদা অনুসারেই শুধু পণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে সবগুলো কারখানায়। স্থানীয় বাজারে পণ্য বিক্রি দিয়েই যাত্রা শুরু হয়েছিল নোমান গ্রুপের। তাই কোম্পানি বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রফতানি বাজার বিস্তৃত হলেও স্থানীয় বাজার থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেয়নি। ভবিষ্যতে সিনথেটিক কাপড়, পলিয়েস্টার ও সিনথেটিকস নির্ভর ফ্যাব্রিকস তৈরিতে বড় বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে নোমান গ্রুপের। নিজেদের ব্যবসাকে পোশাক ও বস্ত্র খাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতের পরিকল্পনায় এগিয়ে যাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। পাশাপাশি রফতানির পরিমাণ বৃদ্ধির মাধ্যমে শীর্ষ রফতানিকারকের স্বীকৃতি ধরে রাখতেও তারা বদ্ধপরিকর। |
.
|